২৮ বছর বয়সী কুমির ‘পিলপিল’ এ পর্যন্ত ১০ বার ডিম দিলেও গত তিন বছর থেকে মা হতে পারেনি। তাই এবার ডিম দেওয়ার পর সে যেন মা হতে পারে এ জন্য ভিন্ন পস্থা অবলম্বন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মা হওয়ার জন্য এবার তার পাড়া ডিম দিয়ে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দু’পদ্ধতিই ব্যবহার করা হচ্ছে। শুক্রবার তার দেয়া এবারের ৪৪টি ডিমের মধ্যে প্রাকৃতিক ভাবেই বাচ্চা ফুটানোর জন্য তার বাসাতে রাখা হয়েছে ২২টি ডিম। আর বাকি ২২টি ডিম কৃত্রিম পদ্ধতিতে ফুটানোর জন্য রাখা হয়েছে দুইটি ইনকিউভেটরে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে শুক্রবার দুপুর থেকে মা কুমির ‘পিলপিল’ তার বাসায় একে একে ৪৪টি ডিম পাড়ে। এরপর ডিমগুলোর কিছু পুকুর পাড়ে কুমিরের তৈরি বাসায় ও বাকিগুলো সরিয়ে কেন্দ্রের ইনকিউভেটরে রাখা হয়। সব ঠিক থাকলে প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ দিন পর ডিম হতে বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ফরেষ্টার মো. আজাদ কবির জানান, কুমির লালন পালন কেন্দ্রের বিলুপ্ত প্রায় লোনা পানি প্রজাতির মা কুমির ‘পিলপিল’ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩ টার দিকে পুকুর পাড়ে তৈরিকৃত তার নিজ বাসায় ডিম দিতে শুরু করে। ঘন্টা খানেক সময়ের মধ্যে একে একে ৪৪টি ডিম দেয় সে। গত তিন বছর পিলপিলের ডিম থেকে কোন বাচ্চা না ফুটায় এবার ভিন্ন পস্থা অবলম্বন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক ভাবেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য এবার কুমিরের বাসায় ২২টি ডিম রাখা হয়েছে। আর বাকি ২২টি ডিম কৃত্রিম পদ্ধতিতে ফুটানোর জন্য রাখা হয়েছে পুরাতন ও নতুন দুইটি ইনকিউভেটরে।
আজাদ কবির বলেন, আশা করছি এখন ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পদ্ধতিতে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হবে। যেহেতু বিগত দুই বছর পিলপিলের ডিম থেকে একটিও বাচ্চা ফুটেনি এ কারণে এবার প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দু’পদ্ধতিই ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে পিলপিল ১০ বার ডিম দিল করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে। তবে মা কুমির পিলপিল গত বছর ৪৪টি ও তার আগের বছর ৪৬টি ডিম দেয়। কিন্তু এ সবের একটি ডিম থেকেও গত তিন বছরে কোনো বাচ্চা ফুটেনি। সবগুলো ডিম নষ্ট হয়ে যায়। তবে এবার সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে করমজলের কুমির জুলিয়েট ও পিলপিলের পরিবারে নতুন অতিথি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২৯ মে অপর মা কুমির ‘জুলিয়েট’ ৫২ ডিম পেড়েছে। তা থেকেও বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্তা নেয়া হয়েছে। প্রতি বছর প্রজনন মৌশুম মে ও জুন মাসে কুমির দুইটি ডিম পাড়ে। গত বছর মা কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল ডিম দিলেও তা থেকে কোনো বাচ্চা ফুটানো সম্ভব হয়নি বলে জানায় এ কর্মকর্তা।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের সূত্র জানায়, এক সময় বাংলাদেশে লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়াল এই তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়াল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু লবণ পানির কুমিরই কোনো ভাবে টিকে আছে। দেশের বিলুপ্ত প্রায় এ প্রজাতির নোনা পানির কুমিরের প্রজনন, বৃদ্ধি ও তা সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে বন বিভাগের উদ্যোগে সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি। বন বিভাগের বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় কেন্দ্রটি। শুরুতেই জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোটবড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে নোনা পানি প্রজাতির ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১৯৫টি কুমির রয়েছে। এদের মধ্যে ছয়টি কুমির বড়। যার মধ্যে স্ত্রী কুমির ‘জুলিয়েট’ ও ‘পিলপিল’ রয়েছে। বাকি ৪টি পুরুষ প্রজাতির। এদের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেয়া কুমিরগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত ৭/৮ বছর বয়সী ৯৭টি ছোট কুমির সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে অবমুক্ত করা হয়েছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে ছাড়া বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পটুয়াখালী বন বিভাগের কাছেও কিছু কুমির অবমুক্ত করা হয়েছে। নোনা পানির কুমির সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর বেঁচে থাকে ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত।
0 coment rios: